উৎসর্গঃ সুন্দরবন ও তার সন্তানদের


এখানেই শতবর্ষ আগে দুলে দুলে বইতো কিছু নির্মল বাতাস
সে বাতাসে মদনটাক নীলগ্রীবা ঈগল আর মাছরাঙাদের সাথে
হাজারো তিলা মুনিয়া খেলা করত সমস্ত আকাশ জুড়ে;
বালিহাঁস মরালি আর গয়লারা মনের সুখে সাঁতার কাটতো সারাদিন
                                         বলেশ্বর নদীর স্বচ্ছ জলে,
লইট্টা পোয়া ভেটকি বাগদা মাছের প্রাচুর্য ছিল
          জালের মতো ছড়িয়ে থাকা শত শত নদী আর খাল জুড়ে…


আজ হতে শতবর্ষ আগে-শিবসা নদীতে ডলফিনগুলো
          মনের সুখে ছুটে বেড়াতো জলছোঁয়া পাখিদের মতো,
বুড়ি গোয়ালিনিতে অজস্র ভোঁদর খেলা করতো মনের সুখে;
হরিণের পালগুলো মুক্ত বিহঙ্গের মতো নেচে নেচে সময় কাটাতো সারাক্ষণ
বানরগুলোও লেগে থাকত সবসময় রাজসিক ঝগড়ায়।
সুন্দরী গেওয়া কেওড়া ছাড়াও অজস্র লতাগুল্মে ছেয়ে ছিল প্রাণীদের এই ভূস্বর্গ
আর এই ভূস্বর্গের সমস্তটা জুড়েই একচ্ছত্র রাজত্ব ছিল বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের।


আজ যেখানে ‘সাউথ সী পর্যটন কেন্দ্র' দেখছো হে নবীন,
শতবর্ষ আগে এই জায়গাটিরই নাম ছিল ‘দুবলার চর’,
আজ যেখানে গড়ে উঠেছে শরণখোলা ইপিজেড-
সেখানেই শতবর্ষ আগে ছিল পাখি আর বণ্যপ্রাণীদের অভয়ারণ্য।
আজ যেখানে দেখছো তোমরা আকাশ ছোঁয়া তিলোত্তমা-
বিশ্বখ্যাত শিল্প নগরী, বিষাক্ত বর্জ্যের নদী আর যান্ত্রিক কোলাহল
শতবর্ষ আগে এখানেই ছিল সজীব কিছু প্রাণীর অস্থিত্ব, শুনশান নিরবতা…


আজ হতে শতবর্ষ আগে প্রাণীদের স্বর্গভূতিতে আগুন জ্বালিয়ে
শ্মশানে পোড়া ছাইয়ে তোমাদের পূর্ব পুরুষেরাই গড়ে তুলেছিল এই তিলোত্তমা নগরী,
লক্ষ প্রাণীর আবাসভূমি কেড়ে নিয়ে তোমাদের পূর্ব পুরুষেরাই আলোকিত করেছিল নিজেদের ঘর।


আজ হতে শতবর্ষ আগে রামপালের কয়লায় রচিত হয়েছিল হাজার বছরের ঘৃণিত ইতিহাস,
বন্যপ্রাণীদের ভূস্বর্গে আগুন জ্বালিয়ে তারা নিয়েছিল ঘৃণ্য এক হটকারী সিদ্ধান্ত।


৩০/৭/২০১৬