কবিতায় ছেদ বা যতি চিহ্নের ব্যবহার নিয়ে কিছুদিন যাবৎ আসর খুব সরগরম। যে যার মতো করে পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন জোড়ালো যুক্তি তুলে ধরছেন, আবার কেউ একগুঁয়েমিভাবে ‘বিচার মানি, কিন্তু তালগাছ আমারই’-এমন ভাব করে গোঁ ধরে বসে বিস্তারিত ব্যাখা চাচ্ছেন। আমার মতো কিছু পাঠকের হয়ত দুটোই ভালো লাগছে। কিন্তু আমার বা অন্য কারোর ভালোলাগা বা মন্দলাগার সাথে তো বিরাম চিহ্নের ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকারের কোন সম্পর্ক নেই। কারো সাথে যখন আমরা কথা বলি, তখন কি একনাগাড়ে মুখ চলতে থাকে নাকি প্রকাশ ভঙ্গির প্রয়োজনে থামতে হয়? আশ্চার্য্য হয়ে কথা বলার সময় কন্ঠস্বরের উচ্চারণ যে ধরণের হয়, ধমক দেওয়ার সময় কি কন্ঠস্বর অনুরূপ থাকে? প্রশ্ন করার সময়? বাক্যের অর্থ সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করার জন্য বাক্য উচ্চরণের সময় বাক্যের মাঝে ও শেষে স্বীকৃত কিছু চিহ্নের ব্যবহার করতেই হবে আমাদের। তা-না হলে তো বাক্যের পূর্ণতা আসবে না। পাঠকের কাছে ভুল বার্তা যাবে। ট্রেনের বগিতে লেখা-


‘অযথা চেইন টানিবেন না, টানিলে ২০০ টাকা জরিমানা’


ঘর্ষণের ফলে কিংবা অন্য কোন কারণে কমা (,)টি উঠে গেছে। একজন যাত্রি সতর্কতামূলক উপদেশটি পড়ছে এভাবে-


‘অযথা চেইন টানিবেন
না টানিলে ২০০ টাকা জরিমানা’…………টানার পরে যা হবার তাই হলো (কাল্পনিক)


কোন বাক্য তৈরীর সময় বিরাম চিহ্নের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করে কেউ যদি নিজ খেয়াল-খুশি মতো বিরামচিহ্ন বসাতে চান (কিংবা না চান) সেটা কখনই বর্ণিত ব্যক্তির নিজস্ব ব্যাপার হতে পারে না। কারণ, যে বিষয়টি আপনি গোড়ামি করে নিজস্ব বা একান্ত ব্যাপার বলছেন, সেটির পাঠক কিন্তু অন্য কেউ। কবি বা লেখন কিন্তু পাঠকের জন্যই লিখেন।


যদি কোন লেখক স্বীকৃত নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তার নিজের ইচ্ছামতো বিরাম চিহ্ন বসান তাহলে কি হয় সেটির নমুনা নিচে একটু দেখি (ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)


"ওগো আমার প্রাণের স্বামী,
আর কতদিন বিদেশে থাকবে?এই কি ছিলো তোমার কথা আমার পা?আরো ফুলে গেছে উঠান,জলে ডুবে গেছে খোকা।স্কুলে যেতে চায় না ছাগল ছানাটা।ঘাস খেয়ে ঘুমাচ্ছে তোমার বাবা।অসুখে ভুগিতেছে মুরগিটা।ছোট ছোট ডিম দিচ্ছে বিড়ালটা।খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো করছে না তোমার প্রিয় কবুতর।কোথায় যেন হারিয়ে গেছে কুকুরটা।পাগল হয়ে গেছে তোমার বড় বোন,আমাদের বাড়িতে এসে উঠেছে একটা চোর।১৪" টেলিভিশনটা নিয়ে গেছে ইঁদুরে,কাঁথা-বালিশ কেটে ফেলেছে টিয়া পাখিটা।দুই দিন আগে মরেছে তোমার বড় খালা।চাঁপাইনবাবগন্জ চলে গেছে বাগানটা।আমে ভরে গেছে ঘরের চাল।স্থানে স্থানে ফেটে গেছে গাভীর পেট।দেখে মনে হয়,বাচ্চা দিবে তারেকের বাপ।রোজ আধা সের দুধ দেয় রাখাল,রান্না করতে গিয়ে হাত পুড়িয়েছে ছাগল ছানাটা।সারাদিন লেজ নেড়ে খেলা করে বড় খোকা।দাঁড়ি কাটতে গিয়ে গাল কেটে ফেলেছে তারেকের বোন।প্রসব বেদনায় ছটফট করছে তারেকের ছোট দুলাভাই।বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে ডাক্তার।সাহেব এসে দেখে গেছেন,তুমি শিগগিরই বাড়িতে আসিবে না। আসিলে অত্যন্ত দু:খিত হইব।
ইতি তোমার জান
সখিনা"


আর কবিতা কোন শিল্প কিনা সে ব্যাপারে দু’একটি কথা বলার ইচ্ছা ছিল। যাঁদের কথায় কিছু এসে যায়, যাঁরা বললে কবিতাটি শিল্প হয় (তাঁরা যদি বলতেন তবে আমার বিশ্বাস পণ্যই হতো) তাঁরা সবাই কিন্তু কবিতাকে শিল্প হিসেবেই উল্লেখ করছেন। এর বেশি কিছু বলার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। তারপরেও যদি কেউ কবিতাকে শিল্প হিসেবে মানতে না চান তবুও আক্ষেপ নেই। কারণ একটাই "যার হয় না হলে, তার হবে না মলে"এই আলোচনার বিষয়বস্তুকে মনে করেই শান্তনা খুঁজবো তখন।


পরিশেষে একটি কথা না বলে থাকতে পারলাম না। আপনার ক্ষেতের আলু তুলে আপনি যদি কাদাসহ পুড়িয়ে খান তবে কেউ কিন্তু আপনাকে কিচ্ছু বলবে না। তবে অন্য কেউ যে সেটি জেনেশুনে খেতে চাইবে না সে ব্যাপারে আমি এক্কেবারে নিশ্চিত। ভালো হয় আলু ধুয়ে সেদ্ধ করে খেলে............