'ঘাসের বুকে বসো নীলিমা!'
ঘাসের বুকে বসো নীলিমা!
আমি স্বর্গে মাথা রেখে আকাশ দেখি।
তোমার রঙিন ওড়না খুলে বানিয়ে দাও ডানা
আমি উড়ে উড়ে ওআকাশের নীল ছুঁই,
মেঘেদের বাড়ি থেকে নিয়ে আসি
তোমার স্নানের বিশুদ্ধ জল।
দেখ নীলিমা! আজ ঘাসেরা পেতেছে আঁচল
আজ মেঘেরা ধরেছে অথৈ জল
আজ আকাশও সেজেছে নীলে নীলে।
আরো কিছুক্ষণ বসো এমন মাটি ছুঁয়ে
আরো কিছুক্ষণ মাথা রাখি তোমার কোলে।
'নীলিমা! তোমার বুকের ভাঁজে'
কতশত সমুদ্রের ঢেউ ভেঙে ভেঙে
তোমার বুকের সমুদ্রেই আজ ভিড়েছে জাহাজ
টালমাটাল নাবিক আমি নোঙর হাতে দুলছি,
মধ্যাকর্ষণ শক্তিরা আজ নিয়েছে ছুটি।
প্রজাপতির ডানায় উড়ে উড়ে ঘুরছি বেজায়
তীরে এসে তরী শেষে এ কোন দোলায়!
নীলিমা! তোমার বুকের ভাঁজে কাঁপে মন
ভীরু নাবিক বুঝি আজ হারাবে দিশা
ঢেউ থামাও, দুহাত বাড়িয়ে আমায় মাটিতে রাখো
আমায় একটু একটু করে ভীষণ ভালোবাসতে দাও।
'আমি তবে লুকাবো কোথায়?'
এই সবুজ ঘাস, এই মেঠো পথ
শুকনো পাতা পোড়ানো ধোঁয়ার কুণ্ডলির মতো কুহেলিকা
ঘাসের ডগার শিশির, এই হিম হাওয়া
কেবল তোমাকেই ছুঁতে চায় নীলিমা!
ঘাসেরা ছুঁটে আসে, মেঠো পথ দাঁড়িয়ে থাকে ঠায়
তোমার উষ্ণ চাদরের তলে খোঁজে এতোটুকু আশ্রয়।
এতোকিছু আমার প্রতিদ্বন্দ্বী!
এই কনকনে হিমেল হাওয়ায়
এই শিরশিরে কাঁপানো বেলায়
এই আবছা-ধোঁয়াটে কুহেলিকায়
আমি তবে লুকাবো কোথায়?
'তোমার হাত ছুঁয়েছে'
তোমার হাত ছুঁয়েছে গাল
আমি চেয়ে আছি বহুকাল,
নীলিমা! সেথায় যেতে আমার বুঝি
লাগবে মহাকাল!
তোমার নাকের ঐ নোলক
দূর থেকে দেখি এক ঝলক,
কাছে যেতে হারিয়ে ফেলি যদি
চেয়ে থাকি তাই অপলক।
'দরজাটা বন্ধ কেন নীলিমা!'
সারাটা দিন খুঁজে খুঁজে
এই তোমার দরজায় এসে পড়েছি,
দরজাটা বন্ধ কেন নীলিমা!
তুমি তো জানো
কতটা অথর্ব আমি তুমি ছাড়া,
মানুষ কতো কিছু ভেবে বসে আছে!
তুমি তো জানো
একপলক না দেখে তোমায়
আমি আমার চোখ খুলিনা,
তোমার স্পর্শ না পেলে সারাটা দিনে
শীতের ঝরা শুকনো পাতার মতো
মূল্যহীন এ সময় আমার।
যখন দরজায় এসে নেড়েছি কড়া
তুমি বললে-
আজ দেখা হবে না!
'ভালোবাসার মানুষগুলো'
পৃথিবীর সব প্রিয় কিছু তুচ্ছ করে
তোমার বুকেই খুঁজেছি শেষ সম্বল।
আমাকে লুকিয়ে রাখো সখি
তোমার আরো গভীরে।
ভালোবাসার মানুষগুলো যদি
এমন হতো, তবে পৃথিবীর
এই অনাসৃষ্টি নিপাত যেত সেই কবে.....
প্রতিটি মানুষরে মুখেই ভেসে উঠত
এক একটা মন্দির।
'জানালায় কী দেখছ নীলিমা!'
জানালায় কী দেখছ নীলিমা!
যখন পেয়ারা গাছে ধরেনি মুকুল
যখন শাখায় পড়েনি বাঁক,
তখন থেকেই তোমার মনের জানালায়
ঠায় দাঁড়িয়ে আছি।
জানালায় তুমি আমার আকাশই দেখতে পাবে
কেবল তোমার জন্যই সাজানো তা
সাত রং ছাড়িয়ে তোমার ভালোলাগার
হাজার রং তুলিতে আঁকা।
আজ তোমার নাকের ফুল
তোমার রঙিন ওড়নাকে বলো-
ওরাও আঙুল উচিয়ে বলবে
তোমার জানালায় চিরকাল আমিই ছিলাম।
'কোমল উষ্ণতা নিয়ে আসে নীলিমা'
চলছে শিশিরের সময়....
সন্ধ্যার ডানায় চড়ে নামে কুহেলিকা
হলুদ সোয়েটার আর কালো শালে মোড়ানো
কোমল উষ্ণতা নিয়ে আসে নীলিমা।
এই হিম সময়ে হিমযাপন বুঝি
হলো আরো মধুময়,
শিশির স্নাত এই আঙিনায়
মৃদ্যু কম্পিত এই বাহুডোরে
বিজয়ী ওড়ে তার উষ্ণ পতাকা।
যদি পাশে থাকো নীলমা! যদি ছুঁয়ে থাকো
হিমালয়ের বরফ আমি করবো জয়।
'সমুদ্র এবং নীলিমা'
সমুদ্রের জল ছুঁয়েছে চরণ তোমার
আমি সে জলেই কাটছি সাঁতার
জল শুনেছি নোনা
আমার কাছে এ জল যেন বহুদিনের চেনা।
ধন্য এই বালুচর
যার বুকে পড়েছে তোমার চরণের ভর।
যদি সমুদ্রের জল হতেম
যদি হতেম সৈকতের বালুরাশি!
নীলিমা! তবে ধন্য হতো জীবন
ধন্য হতো আজন্ম ভালোবাসার কাঙাল এক কবি।
'কালো শাড়িতে নীলিমা'
বহুদূর পথ হেঁটে হেঁটে পা ফেলেছি
আলোকিত এই উপত্যকায়,
মোমের নিচে অন্ধকার থেকে বেড়িয়ে
ছুঁয়েছি তোমার নন্দিত পূর্ণিমা।
ঘোর অমাবস্যায় জোনাকির আলোর মতো
কালো শাড়িতে তুমি মোহময় মুগ্ধতা,
নীলিমা! তোমার এই উপত্যকায় দাও ঠাঁই,
আমার এই ক্লান্তি, এই নিরব অন্ধকারটুকু
জোনাকির আলোয় ভরিয়ে দাও!
'কেন ঢেকে রাখ'
কেন ঢেকে রাখ চোখ, এই ঠোঁট
শিশির ভেজা কোমল ঘাসের ডগার মতো তুলতুলে কপোল!
তোমার এই আঁচলটুকু বোশেখের মেঘের মতো
কেন ঢেকে রাখে আঁধার ভূখন্ডের মৃদ্যু জোছনা!
এক মহাকাল পাড়ি দিয়ে এসেছে পৃথিবী
চাঁদের চমকিত-পুলকিত বদনের দিকে চেয়ে চেয়ে,
যতোক্ষণ এই স্নায়ুর স্পন্দনটুকু টের পাই
তোমার মুখের দিকে তাকিয়েই কাটাতে চাই।
আঁচলটুকু সরিয়ে নাও, দুচোখ ভরে দেখতে দাও মধুপূর্নিমা।
'নীলিমা! কেন বিশ্বাসের বাড়ি করছ লুট!'
ভালোবেসে বেসে তীর্থ ছুঁয়েছি,
আজ কেন বিশ্বাস নিয়ে ঘনঘটা!
তোমার জন্য হলুদ গাঁদার কানন সাজাতে
হলুদের পিছু ছুটতে গিয়ে
হয়তো কিছুটা সময়ের দূরত্ব....
নীলিমা! কেন বিশ্বাসের বাড়ি করছ লুট!
যেখানেই থাকুক জলরাশি
সমুদ্রে নির্ঘাত হবেই ফেরা,
বাষ্পিত জল মাটির বুকে ফিরবেই বৃষ্টি ধারায়।