শেষ পর্ব
এদিকে ফকির দ্বারে দ্বারে ঘুরে মধ্য দুপুর বেলা
খাল পাড়ে এসে বিশ্রাম লাগি বসে বুড়ো বট তলা
দক্ষিণ হতে উদাসী হাওয়া লাগে এসে তার গায়ে
গাছের ছায়ায় লুটিয়ে পড়ে সে শীতল পরশ পেয়ে
চোখের পাতায় তন্দ্রার ঘোর কোথা হতে যেন এসে
পরম সুখের আবেশে জড়ায় কত যেন ভালবেসে।
তারি খুব কাছে রায়ের বেটায় নিজ ক্ষেতে কাজ করে
থেকে থেকে শুধু পথ পানে চায় খিদেটা উঠেছে চড়ে
বধূয়া যে তার আসে না তো আর ক্ষুধায় অঙ্গ জ্বলে
সূর্যটা যেন যত তাপ আছে দিচ্ছে আজিকে ঢেলে
দেহ টা  যে আর চলছে না তার কী কাজ করবে ছাই!
তাই নিতে হলো ফেলে রেখে কাজ বটের ছায়ায় ঠাঁই।
দেখিল সেখানে কানাই ঘুমিয়ে কোমল ঘাসের 'পরে
ময়লা ঝোলাটি পাশেই রয়েছে বড় বেশি অনাদরে।
কী যে কৌতুহল জাগিল পরাণে ঝোলা টেনে নিল কাছে
ভীষণ লালসা চড়িল মাথায় দেখিতে হবে কি আছে!
গিট খুলে লয় তড়িঘড়ি করে কানু জেগে ওঠে পাছে
দেখিল সেথায় ক্ষুধা উপশমে ভাল উপায় মিলেছে।
আগে পিছে কিছু ভাবিল না আর টপাটপ দিল মুখে
আয়েশি ভঙ্গে রসালো ভোজন সারিল পরম সুখে।
ক্ষণপরে হায় বিষের ব্যথায় কুঁকড়ে উঠিল বাছা
গলা চিড়ে যায় বিষম পীড়ায় ভাঙিছে বুকের খাঁচা
সকল জগত ভনভন ঘোরে, অসাড়ে থাকে সে পরে
চোখের পাতায় আন্ধার নামে, অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
স্বর্গবাসী তার স্নেহময়ী মাতা বাড়ায়েছে হাত যেন
আহ্লাদে তারে ডেকে কয় ওরে এত ব্যথা তোর কেন
আয় মোর কাছে যত দাগা আছে দূর করে দেব সব
থাকিবি সুখেতে আমার কোলেতে করে সদা উৎসব
তারপর চোখে একে একে ভাসে সব ক'টি প্রিয়মুখ
যাদের সাথে ভাগাভাগি করেছে জীবনের সুখ-দুখ
শেষবার তরে রূপসী বধূর মুখটি নয়নে ভাসে
হাস্যময়ীর ছবি দেখে দেখে দুটি আঁখি বুজে আসে।

ঘুম হতে জেগে দেখিল কানাই নিথর শরীরটারে
বুঝতে কিছুই রইল না বাকি আর কে মারিল কারে
মৃদুপায়ে হেঁটে চলিল কানাই ঝোলাটি রইল পরে
হায়!কার ক্ষতি,কে করে গো বিধি, যার ক্ষতি সে-ই করে!