তোমাকে হারাবার ভয়ে একদিন আমার সমস্ত শরীরটা নীল হয়ে যেত।
আমার রক্ত-মাংস-শিরা-উপশিরা সব ঠাণ্ডা হয়ে কুঁকড়ে আসত।
হৃদয়ের গহিন থেকে ভেসে আসা এক নিগূঢ় দুঃসহ শূন্যতামেশানো অদ্ভুত ভয় আমার রক্তস্রোত আর মাথাকে স্তব্ধ করে দিতে চাইত।
তোমাকে হারাবার ভয়ে আমি হাঁটতে পারতাম না; সারাদিন আমার খিদে পেত না।
বুকের বামপাশটা ভয়ে হু-হু করে উঠত; শরীরে দিয়ে উঠত কাঁটা।
আমি সারাদিন আকাশের দিকে উদাস চোখে একমনে তাকিয়ে থাকতাম।
রাতের বেলা ঘুমুতে পারতাম না।
রাত নেমে এলেই ভয়গুলো সব এক জোট হয়ে আমার শরীরকে জাপটে ধরত।
তোমাকে হারাবার ভয়ে কতকাল যে আমি নির্ঘুম রাত পার করেছি তা আমি আজ তোমাকে হিসেব করে বলতে পারব না।


তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি সেই কবে; সে-ই কবে।
আজ আর তোমাকে হারানোর সেই ভয় নেই।
ভয়গুলো সেই কবেই কর্পূরের মতো উবে গেছে বিস্তীর্ণ আকাশে।
তবে ধু-ধু দুঃখ আছে, ম্লান হাহাকার আছে, হু-হু আক্ষেপ আছে।
তোমাকে হারিয়ে ফেলার পর পড়ে রয়েছে সেই ধু-ধু দুঃখগুলো।
ধু-ধু দুঃখগুলোই এখন আমার প্রতিমুহূর্তের সঙ্গী।
দুঃখগুলোকে আমি নিবিঢ়ভাবে ভালোবাসি।
দুঃখগুলোকে আমি প্রতিমুহূর্তে প্রবলভাবে নিংড়িয়ে তা থেকে শুষে বের করে আনি আনন্দের অনিন্দ্য স্নিগ্ধ ঝরনাধারা।
আমি সেই আনন্দগুলোকে ছড়িয়ে দেই নিস্তব্ধ রাতের আকাশের অজস্র তারায়, বাতাসের ঠাণ্ডা হিল্লোলে, সমুদ্রের ভয়াল মহাতরঙ্গে।


ঐ নির্মেঘ রাতের আকাশে যত তারা দেখো, সেগুলো আমার দুঃখ থেকে নিঃসৃত আনন্দধারা।
ঐ সমুদ্রে যত কল্লোল দেখো, তা আমার দুঃখ থেকে নিঃসৃত আনন্দধারা।
ঐ বাতাসে যত হিল্লোল দেখো, তা আমার দুঃখ থেকে নিঃসৃত আনন্দধারা।
আমি সেই দুঃখনিঃসৃত হিম আনন্দে আকাশে ভাসি, পাখির সাথে কথা বলি, প্রজাপতির সাথে বাতাসে নাচি, গহিন অরণ্যে গিয়ে ফুলের নিবিড় গন্ধ নেই, আর টলটলে ঝরনার মতো হয়ে সৃষ্টি করে চলি আগুনস্নিগ্ধ বিমুগ্ধকর সব কবিতা।